শেখ হাসিনার মৃত্যুদন্ডের রায়ে বাংলাদেশে আ’লীগ প্রতিক্রিয়াশুন্য
রায় ঘোষনার দিন সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বাড়ী ভাঙার চেষ্টা চলে। সেনাবাহিনী, পুলিশ সেটা রুখে দিলেও উত্তেজনা চলছে
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিতন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেন মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৭ নভেম্বর দুপুরে এই রায়া ঘোষণা করা হয়। এ রায় ঘোষণার পর থেকে রাজধানীতে কার্যক্রমা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কোনও উপস্থিতি বা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
এ রায় ঘোষনার দিনক্ষন (১৩ নভেম্বর) ঘোষনা কেন্দ্র করে যেভাবে ককটেলা বিস্ফোরন ও গাড়ীতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে, তাতে রায় ঘোষনার পর তোলপাড় হওয়ার অশংকায় কঠোর ব্যবস্থা নেয় আইনশৃংখলাবাহিনী।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সরকারি স্থাপনা, কোর্ট প্রাঙ্গণ, কূটনৈতিক এলাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও গণজমায়েতপ্রবণ স্থানগুলোতে ব্যাপক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছিল র্যাব, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পুলিশ বলছে, এই রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে।
পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা নাশকতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রায়কে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা বরদাশত করা হবো না।’ এমন কঠোর নজরদারীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ছিলা প্রতিক্রিয়াশুন্য। শুধু প্রতিক্রিয়া শুন্যই, অপ্রত্যাশিত এমন রায়ে অনুভুতি শুন্য হয়ে স্থম্ভিত হয়ে যায় আওয়ামী লীগ। বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তত চার কোটির উপরে আওয়ামী লীগের নেতা,কর্মী, সমার্থক। কিন্তু এত বিশাল পরিমান মানুষ শেখ হাসিনার মত তাদের মুল যে নেতা তার ফাসিতে এভাবে অনুভুতি শুন্য আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়েও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রায়কে ঘিরে যে কোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এখনও। রায়ের দিন বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে যান চলাচল স্বাভাবিকেরা তুলনায় অনেক কম থাকলেও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ কিছু ঝটিকা মিছিল করলেও হাসি-নার রায়ের পর এমন কিছুর খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ছিল পাল্টা প্রতিক্রিয়া।
হাবিব হাসানের ছোট ভাইর বাড়ীতে আগুন
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসানের ছোট ভাই নাদিম হাসানের উত্তরার বাসায় আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে বাড়ির সামনে রাখা একটি মাইক্রোবাস পুড়ে গেছে।
গতকাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৩ নম্বর রোডের বাড়িটিতে এই আগুনা দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষেন বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সময়ে টুঙ্গিপাড়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রায়ের বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
এদিন বেলা ২টা ৫০ মিনিটে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে দুটি অভিযোগে ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেনা আদালত। ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানা খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
রায় ঘিরে সকালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কাশিয়ানী উপজেলায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধা করে গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গোপালগঞ্জের কাশিয়ান উপজেলার তিলছড়া বাজার এলাকায়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। খবর পেয়ে কাশিয়ানী থানা পুলিশা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ গাছের গুঁড়ি সরিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচলের স্বাভাবিক করে।
রায়ের পরের দিন আজ দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে কোনো প্রতিক্রিয়া বা কর্মসূচির খবর মেলেনি। একপ্রকার নীরব অবস্থা বিরাজ করছে দলটির মধ্যে। যা বিস্ময়ের জন্য দিয়েছে।
এ দিকে রায় ঘীরে শেখ হাসিনা নিজে ও দলের কেউ কেউ যারা বিদেশে অবস্থান করছেন তারা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তবে দেশে অমনটা কেউই বলেনি।
কমেন্ট বক্স